মস্তিষ্ক সম্পর্কে অজানা ১০ টি বিষয় (পর্ব-১)

brain-power-comparison-male-felame
পুরুষ ও মহিলার মধ্যে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ও কার্যকারিতার তুলনা
মানব মস্তিষ্ক অনেক প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের কাছে এক বিস্ময়কর ব্যাপার। বিখ্যাত শারীরস্থানবিদ,গ্যালেন বলেছেন মস্তিষ্কের কাজ হল চলাফেরা ও নির্দেশ প্রদান করা, কিন্তু তিনি আরও বিশ্লেষণ করছেনমস্তিষ্কের সাদা ও ধূসর বস্তুগুলো। এ যেন আমাদের দুই কানের মাঝে বসানো এক অবাক বিস্ময়। আসুন জেনে নেয়া যাক মস্তিষ্ক সম্পর্কে অজানা কিছু বিষয়ঃ

ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের মস্তিষ্কই সমভাবে কার্যকর

অনেকের মুখেই আমরা বলতে শুনি যে, ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ও কার্যকারিতায় পার্থক্য রয়েছে। হ্যাঁ, যদিও আমরা জানি যে একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মস্তিষ্কে ভিন্ন ধরনের হরমোনের প্রবাহ ঘটে থাকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যকলাপ সংঘটনের জন্য। কিন্তু তা সত্বেও একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মস্তিষ্ক ও মস্তিষ্কের ক্ষমতায় তেমন কোনো তারতম্য লক্ষ করা যায়নি, সম্প্রতি গবেষণা আকারে প্রকাশিত আমেরিকান সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোলজিকাল বুলেটিন এর গবেষণা পত্রে।

কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্ক সম্পুর্নরূপে পরিপক্ক্ব হয় না

Teen-brains-arent-fully-formed
১৬-১৭ বছরের আগে কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্ক পুরোপুরি পরিপক্ক্বতা লাভ করে না

কৈশোরের পুরো সময়টা জুড়েই মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব গুলোতে ব্যপক পরিবর্তন আসে। এই ফ্রন্টাল লোবকেই বলা হয়ে থাকে বিচার-বুদ্ধি এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার স্থান।

২০০৫ সালের প্রকাশিত এক গবেষণায় চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট, জানায় যে, বহুমুখী কাজ-কর্ম সাধনের জন্য মস্তিষ্কের যে অংশের প্রয়োজন পড়ে তা ১৬-১৭ বছরের আগে পুরোপুরি পরিপক্ক্বতা লাভ করে না। আরও একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে, এই সময়্টাতে কিশোর-কিশোরীরা অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায়, সহসাই এমন কোনো কাজ করতে দ্বিধা বোধ করে না, যা অন্যের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত হয় মেডিয়াল প্রিফ্রন্টাল করটেক্স (মস্তিষ্কের এই অংশ মূলত সহানুভূতি ও অপরাধ অনুধাবনের সাথে জড়িত) দ্বারা।

মস্তিষ্কের ভিতরের ভাজ মস্তিষ্ককে করে আরও বেশি কার্যকর

brain wrinkles, সেরিব্রাল করটেক্স, নিউরণ, স্নায়ুকোষ
সেরিব্রাল করটেক্স, যা প্রায় ১০ হাজার কোটি নিউরণ বা স্নায়ুকোষে ভর্তি থাকে


যদি প্রশ্ন করা হয় আমাদের প্রজাতি এত বুদ্ধিমান কেনো? হয়ত উত্তরটা হবে মস্তিষ্কের ভিতরের ভাজ পড়া। মস্তিষ্কের উপরিভা্গে থাকে গভীর ফাটল ও ছোট ছোট খাজ। এই উপরিভাগকে বলা হয় সেরিব্রাল করটেক্স, যা প্রায় ১০ হাজার কোটি নিউরণ বা স্নায়ুকোষে ভর্তি থাকে।

এইসব ভাজের মূল উপকারিতা হল, এতে মস্তিষ্কে বেশি জায়গার সংকুলান হয় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এমনটাহাতির ক্ষেত্রেও দেখা যায়, তবে বিস্ময়কর হল, সম্প্রতি এক গবেষণায়

দেখা গেছে ডলফিন এর মস্তিষ্কে এই ভাজের পরিমান মানুষের চাইতেও বেশি।

মস্তিষ্কের কার্যক্রম দলগতভাবে ঘটে থাকে


ব্লাড-ব্রেইন ব্যরিয়ার
ব্লাড-ব্রেইন ব্যরিয়ার মস্তিষ্কে প্রবাহিত খাদ্য ও পুষ্টি এর তদারকি করে
মস্তিষ্কের রক্ত-সংবহন্তন্ত্রে কিছু কোষের অবস্থান থাকে যাদের বলা হয় ব্লাড-ব্রেইন ব্যরিয়ার। এদের কাজ হলো ধরুন একটি সিকিউরিটি গার্ডের মত, এরা মস্তিষ্কে প্রবাহিত খাদ্য ও পুষ্টি এর তদারকি করে, অতি মাত্রায় বড় খাদ্য কণাকে বাধা দেয়, যা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষতি বা কার্যকলাপে ব্যঘাত ঘটাতে পারে।

কিন্তু সমস্যটা হল যে এই ব্লাড-ব্রেইন ব্যরিয়ার জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রবাহেও বাধা দেয়, কারণ ওষুধের কণা গুলো একটু বড় আকারের হয়ে থাকে যা ব্লাড-ব্রেইন ব্যরিয়ার অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়। তাই সম্প্রতি Cancer Research এর গবেষনায় দেখা গেছে যে ন্যনো-প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই বাধা অতিক্রম করা যেতে পারে, যা টিউমার এর চিকিৎসায় ওমরণব্যধি ক্যান্সার নিরাময়ে ব্যপক ভূমিকা রাখবে।

মস্তিষ্কের আকার দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে

মস্তিষ্কের আকার দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে, brain shrink
আমাদের মস্তিষ্কের আকার প্রায় ৯ ঘন ইঞ্চি (১৫০ ঘন সেন্টিমিটার) কমেছে যা আগে ছিল গড়ে প্রায় ৮২ ঘন ইঞ্চি (১,৩৫০ ঘন সেন্টিমিটার)ছোট হয়ে যাচ্ছেন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে
৫০০০ বছর আগে মনুষ্য মস্তিষ্কের আকার বর্তমান মানুষদের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বড় আকারের ছিল। হ্যাঁ, সময়ের এই পরিক্রমায় আমাদের মস্তিষ্কের আকার প্রায় ৯ ঘন ইঞ্চি (১৫০ ঘন সেন্টিমিটার) কমেছে যা আগে ছিল গড়ে প্রায় ৮২ ঘন ইঞ্চি (১,৩৫০ ঘন সেন্টিমিটার)
বলা হয়ে থাকে, আমাদের মস্তিষ্ককে ধারন করা মাথার খুলি এর আকার ছোট হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে, যা আগে বড় ছিল কারণ অনেক শক্ত ও বড় আকারের খাদ্য আমাদের পূর্ব-পূরুষদের গ্রহণ করতে হত। তবে কারণ যাইহোক না কেনো, মস্তিষ্কের আকার বড় বা ছোট হওয়ার সাথে বুদ্ধিমত্তা কম-বেশী হওয়ার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তাই এটি মনে করা যাবে না যে, আগের দিনের মানুষেরা আমাদের তুলনায় অনেক বেশি বুদ্ধিমান ছিল।


এমনই মস্তিষ্ক সম্পর্কে আরও কিছু অজানা ও বিস্ময়কর বিষয় জানাবো পরবর্তী লেখাটিতে, আশা করি ভালো থাকবেন এবং NursalamWEB এর সঙ্গেই থাকবেন।
যদি আপনার জানা থাকে এমন কিছু অজানা ও বিস্ময়কর বিষয় মস্তিষ্ক সম্পর্কে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর লেখাটি আপনার কেমন লাগলো তা আমাদেরকে অবশ্যই জানাবেন। আপনার মতামত আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান।