কোয়ান্টাম তত্ত্ব

কোয়াণ্টাম তত্ব

                                                     
ঘটনা : ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : ম্যাক্স প্লাঙ্ক


বোধ করি বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল ঘটনা হল জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্কের 'কোয়াণ্টাম তত্ব' উদ্ভাবন যার দ্বারা প্ল্যাঙ্ক পদার্থ বিজ্ঞানের এক নূতন দিগন্তের দরজা খুলে দিয়ে বিকিরণ শক্তির নিয়মটি খুঁজে বার করে এক নিশ্চিত উন্নতির সাক্ষর রাখলেন। সেদিনটি ছিল ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর : ম্যাক্স প্লাঙ্ক বার্লিন বিশ্বসিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের এক সেমিনারে উপস্থাপন করলেন একটি নূতন ফরমূলা- কৃষ্ণবস্তু থেকে বিকিরণের এন্ট্রপি ফরমুলাকে আরও ব্যাপক করে পরিবর্ধিত করে ; যেন ঘটে গেলো এক নিঃশব্দ বিপ্লব।
সে সময় পদার্থ বিদ্যায় এক বিরাট সমস্যা ছিল কৃষ্ণবস্তু ( য়লঅচকয়ওদয ) থেকে বেড়িয়ে আসা বিকিররণের চরিত্র ব্যাখ্যা করা। সনাতনী তাপ-গতি বিদ্যা এই সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সমাধান করতে পারে না। এ বিষয়ে কাজ করেন বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশিষ্ট পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানী হেনরিক রুবেন, আর্নস্ট প্রিংসাইম, অটো লুথান প্রমুখ আরও বিজ্ঞানী ; আর উত্সাহী তাত্বিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছিলেন ডব্লু ভিন, লর্ড র‍্যালে এবং কে. এইচ. জিনস্।
কৃষ্ণবস্তু এমন একটি বস্তু যার উপরে আপতিত সকল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িত্-চুম্বকীয় তরঙ্গ শোষণ করে নেয়। একটি গর্তের সরু মুখ বা ওভেনের দরজা কার্যতঃ কৃষ্ণবস্তুর মতন ব্যবহার করে। ১৭৯২ খ্রী-তে টি. ওয়েজউড লক্ষ্য করেছিলেন যে তাপিত সকল বস্তু একই তাপমাত্রায় রক্তিম হয়ে যায়। পরবর্তীকালে এই অনুমানের সঠিক ব্যাখ্যা দেন কারচফ। ১৮৫৯ খ্রী-তে তিনি তাপ-গতি তত্বের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে বিকিরণ শক্তি ও শোষণ সহগের অনুপাত কেবল মাত্র কম্পাংক ও তাপমাত্রার অপেক্ষক, বস্তুর চরিত্রের উপর নির্ভরশীল নয়।
১৮৯৩ খ্রী-তে ডব্লু ভাইন আরেক ধাপ এগিয়ে তাপ-গতি তত্ব ও ম্যাক্সওয়েলের তত্বকে সংযুক্ত করে দেখাতে সক্ষম হলেন বিকিরণশক্তি দুটি সংখ্যার গুণফল। সংখ্যাদুটি হল : কম্পাঙ্কের ত্রিঘাত ও কম্পাঙ্ক- তাপমাত্রার অনুপাতের অপেক্ষক। যদিও ভাইনের নিয়ম থেকে সহজেই স্টিফেন-এর নিয়মে আসা যায় তথাপি এই তত্বে বিকিরণশক্তি অসীম হতে চাইল যা্ একেবারেই অসম্ভব।
কৃষ্ণবস্তুর দেওয়ালে হার্জিয়ান কম্পকদের এক রকম শক্তি -বণ্টন ব্যবস্থা ও এক ধরণের এনট্রপি বণ্টন-ব্যবস্থা আছে। সাম্য অবস্থায় এনট্রপি সবচেয়ে বেশি হতে হবে এবং তা' পরিসংখ্যান পদ্ধতির সাহায্যে গণনা করা যায় বোলজ্ম্যানের মৌলিক সমীকরণটি কাজে লাগিয়ে। সম্ভাব্যতা গণনা করতে গিয়ে প্ল্যাঙ্ক দেখলেন কম্পকের শক্তিকে ছোট অথচ সসীম অংশে- ' কোয়াণ্টা '-য় ভাগ করে ফেলা সুবিধাজনক। এই অনুমানের সাহায্যে প্ল্যাঙ্ক একটি কম্পকের গড় শক্তি পরিমাপ করতে পারলেন। এর থেকেই এলো কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ ফরমূলা।
১৯৩১ খ্রী-তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থ বিজ্ঞানী আর ডব্লু উড প্ল্যাঙ্ককে জিজ্ঞাসা করেন যে কোয়াণ্টাম তত্বের মতন একটি অবিশ্বাস্য জিনিষ কি ভাবে আবিষ্কার করলেন। প্ল্যাঙ্কের উত্তর হল:
" It was an act of desperation. For six years I had struggled with the black body theory. I knew that the problem was fundamental and I knew the answer. I had to find a theoretical explanation at any cost, except for the invio- lability of the two laws of thermodynamics. " [1]

"খানিকটা মরিয়া হয়ে এ কাজ করেছি। ছয় বছর ধরে আমি কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ তত্ব নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমি জানতাম সমস্যাটি মৌলিক এবং তার উত্তর আমার জানা ছিল। যে কোনও উপায়ে আমাকে তাত্বিক ব্যাখ্যা বার করতে হবে যা তাপগতিতত্বের দুটি নিয়ম বিঘ্নিত করবে না।"