কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি

জৈব যৌগ পৃথকীকরণে কলাম ক্রোমাটোগ্রাফির কৃত্কৌশল
( Column Chromatography Technique for Organic Compound Separation )

                                                     
আবিষ্কার : ১৯০১ খীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : মিখাইল টিভেট, রশিয়া


একটা সাদা দড়ি বা সুতা (string)-র একটা দিক ঝুলন্ত অবস্থায় রঞ্জকের পাত্রে নিমজ্জিত করে রাখলে দড়িটি রঞ্জককে শুষে নিতে শুরু করে । কিন্তু রং বিভিন্ন হলে দড়ি ধরে ওঠার দূরত্বও হবে বিভিন্ন । বহুদিন ধরেই রঞ্জক প্রস্তুতকারকরা 'ক্রোমাটোগ্রাফি' ব্যবহার করে আসছেন, মিশ্রণ থেকে বিভিন্ন রংকে আলাদা করার কাজে, বিশেষতঃ যদি মিশ্রণের উপাদানগুলি অল্প পরিমাণে হয় । এই কৃত্কৌশলটি অত্যন্ত প্রযোজ্য যখন মিশ্রণের উপাদানগুলির ভৌতিক (physical) ও রাসায়নিক (chemical) ধম একই হয় এবং সাধারণ পৃথক্করণের উপায়গুলি কাজে দেয় না । 'ক্রোমাটোগ্রাফি' কথাটির অর্থ রং দিয়ে লেখা [গ্রীক ভাষায় : khromatos অর্থ রং, graphos অর্থ লিখিত]। ক্রোমাটোগ্রাফি কৃত্কৌশলটি আবিষ্কার করেন মিখাইল সোয়েট (Mikhail tswett) ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে ।

ক্রোমাটোগ্রাফি-তে আলাদা করার কৃত্কৌশলগুলির ভিত্তি হল মিশ্রণে উপাদানগুলির বিন্যাস- স্থির (stationary) এবং সচল (mobile) অবস্থা । স্থির অবস্থাটি হতে পারে একটি শোষকের কলাম, একটি কাগজ, একটি পাতলা শোষকের আবরণ কাচের উপর, ইত্যাদি, যার মধ্য দিয়ে সচল অবস্থা যায় । সচল অবস্থাটি হতে পারে তরল পদার্থ বা গ্যাস । যখন স্থির কঠিন অবস্থাকে একটি কলাম হিসাবে নেওয়া হয়, প্রথাটিকে বলা হয় 'কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি' ( চিত্র ) ।
কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি

চিত্র : কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি
কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি-তে সাধারন শোষকগুলি হল সিলিকা, আলুমিনা, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ম্যাগনেসিয়া, স্টার্চ, ইত্যাদি । দ্রাবক (solvent) নির্বাচন করা হয় শোষক ও দ্রাবকের প্রকৃতি বিচার করে । মিশ্রণের উপাদানগুলির কত তাড়াতাড়ি পৃথক্করণ হবে তা' নির্ভর করবে শোষকের তত্পরতা এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার উপর । যদি শোষকের তত্পরতা খুব উচ্চ হয় এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার খুব কম হয়, পৃথক্করণ হবে খুব ধীরে, কিন্তু তার গুণমান হবে ভাল । অন্যদিকে যদি শোষকের তত্পরতা নিম্নস্তরের হয় এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার উচ্চস্তরের হয়, পৃথক্করণ হবে খুব তাড়াতাড়ি, কিন্তু গুণমান হবে নিকৃষ্ট অর্থাত্ উপাদানের পৃথক্করণ ১০০-শতাংশ বিশুদ্ধ হবে না ।
শোষককে তরলায়িত (slurry) করা হয় উপযুক্ত তরল পদার্থ সংযোগে এবং ঢালা হয় একটি নলাকৃতি টিউবে যার তলাটি হল ছিদ্রপূর্ণ বা তুলা দিয়ে আটকানো । যে মিশ্রণটিকে আলাদা করতে হবে, তাকে একটি উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত করে টিউবে উপর দিক থেকে ঢালতে হবে । মিশ্রণ টিউব ধরে যত নামবে উপাদানগুলি বিভিন্ন উচ্চতায় শোষিত হবে ; যার শোষণ-ক্ষমতা সবথেকে বেশি সে থাকবে সবথেকে উপরে এবং সেই মতন নলের উপরথেকে নীচে আলাদা আলাদা ব্যাণ্ড তৈরি হবে । যে পদ্ধতিতে শোষক থেকে উপাদানগুলিকে ব্যাণ্ডে রূপান্তর করা হয়, তাকে বলে 'এলুশন' (এলতেেওন) ।