আধুনিক বিবর্তনীয সংশ্লেষণ

আধুনিক বিবর্তনীয সংশ্লেষণ
                                                                      

সময়কাল : ১৯১৮ থেকে ১৯৩২ এবং ১৯৩৬ থেকে ১৯৪২ খ্রীস্তাব্দ
বিজ্ঞানী : রোনাল্ড ফিশার, জে.বি.এস. ঃলডেন এবং অন্যান্যেরা ।


১৯১৮ থেকে ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে বংশগতি বিজ্ঞানে গবেষণার সমারোহে বিপুল উত্‍‌সাহের সঞ্চার হয়েছিল তার থেকে বেড়িয়ে এলো যে, মেণ্ডেলিয়ান বংশগতি তত্ত্ব প্রাকৃতিক নির্বাচন(natural selection)এবং ক্রম-বিবর্তন(gradual evolution)- একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ । ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৭ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে এই সংশ্লেষণ একটা সম্মিলিত ভাবধারার সৃষ্টি করলো বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি বিষয়ে । সৃষ্টি হল ' আধুনিক বিবর্তনীয সংশ্লেষণ '(modern evolutionary synthesis)যা' প্রদান করলো বিবর্তনের এক বহু স্বীকৃত কারণ । এই সমন্বয় বর্তমানে বহুলাংশে বিবর্তনীয জীববিদ্যার আদর্শ ।

পরীক্ষামূলক জীববিজ্ঞান এবং বিবর্তনের মধ্যে এবং একইভাবে মেণ্ডেলীয় জেনেটিক-তত্ত্ব, প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং উত্তরাধিকার বিষয়ে ক্রোমোজোম-তত্ত্ব(chromosome theory)- এর মধ্যে একটি গুরুতর যোগসূত্র এসেছিল টমাস মরগানের fruit flyDrosophila melanogaster উপর গবেষণা থেকে । উত্তরাধিকার বিষয়ে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা মেণ্ডেলীয় ক্রোমোজোম-তত্ত্ব ব্যক্ত করেন ১৯১৫ খ্রী-তে তাঁদের গবেষণাপত্র The Mechanism of Mendelian inheritance-এর মধ্য দিয়ে । এসময়ে বহু জীববিজ্ঞানীই ক্রোমোজোমের মধ্যে জীনের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন, তবে কিভাবে এটি প্রাকৃতিক নির্বাচন ও ক্রমিক বিবর্তনের সঙ্গে সুসঙ্গত তা' পরিষ্কার হয়নি ।
প্রশ্নটির আংশিক সমাধান দিলেন রোনাল্ড ফিশার ১৯১৮ খ্রী-তে তাঁর গবেষণাপত্র The Correlation Between Relatives on the Supposition of Mendelian Inheritance-এর মধ্য দিয়ে । ফিশার দিয়েছিলেন মেণ্ডেলিয়ীয় উত্তরাধিকার তত্ত্বের একটি দৃঢ় পারিসাংখ্যিক মডেল যা মেণ্ডেলীয় ও জীবমিতি (biometric)- দুটি ধারাকেই সন্তুষ্ট করেছিল । এই পত্রটিকে অনেক সময় বলা হয় সংশ্লেষণ-তত্ত্বের প্রথম ধাপ ।

মরগানের ছাত্র Theodosius Dobzhansky প্রথম প্রয়োগ করলেন মরগানের ক্রোমোজোম তত্ত্ব এবং সংশ্লিষ্ট জনসমষ্টির বংশগতি-বিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক জীবগুলির জনসংখ্যা নির্ণয়ে, বিশেষভাবে Drosophila pseudoobscura । ১৯৩৭ খ্রী-তে তাঁর লেখা Genetics and the Origin of Species-কে গণ্য করা হয় neo-Darwinism- এর প্রথম পুর্নাঙ্গ কাজ ।

মেণ্ডেলের কাজের এই নব-আবিষ্কার সৃষ্টি করলো ডারউইনের অভিব্যক্তি বাদ তত্ত্বের একদল সমালোচক ( Bateson, deVries ও অন্যান্যেরা ) যারা বিশ্বাস করতেন যে জনপ্রতি বিচ্ছিন্ন বিশেষত্বের বিভেদগুলি ডারউইনের বাহ্যসত্তার ধীরগতি পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খায়না । চিন্তানায়কদের আর একটি গ্রুপ, যারা বিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে আবির্ভুত হয়েছিলেন জীবমিতি(biometrics)- কে কেন্দ্র করে যথা,(Karl Pearson, Francis Galton ও অন্যান্যেরা ) মেণ্ডেলবাদীদের বিরুদ্ধতা করতেন । এরা তথাকথিত পরিমানজ্ঞাপক লক্ষণগুলিকে অধ্যয়ন করছিলেন পারিসাংখ্যিক প্দ্ধতির দ্বারা, ধরে নিয়ে যে, লক্ষণগুলির উপর জীনের ক্রিয়া খুবই সামান্য । এই মতবিরোধ মেটালেন ফিশার ( ১৯১৮ খ্রী ) যিনি দেখালেন যে মেণ্ডেলের উত্তরাধিকার তত্ত্ব এবং বাহ্যসত্তার ক্রমিক পরিবর্তন এক নয় । পরবর্তী দু'-দশকে ফিশার, জে.বি.এস.হলডেন এবং সেওয়াল রাইট-সহ অন্যেরা গণিতের সাহায্যে জীন-তত্ত্ব ও ডারউইনের বিবর্তনবাদ-এই দু'-এর সমন্বয় দেখালেন যার দ্বারা আধুনিক সংশ্লেষণ (modern synthesis)-তত্ত্বের পথ সুগম হল ।
' আধুনিক বিবর্তনীয সংশ্লেষণ '(modern evolutionary synthesis)- কে আরও কয়েকটি নামে অভিহিত করা হয় যথা, নূতন সংশ্লেষণ (the new synthesis), আধুনিক সংশ্লেষণ (the modern synthesis), বিবর্তনীয় সংশ্লেষণ(the evolutionary synthesis), শতাব্দীর
সংশ্লেষন(millennium synthesis)এবং নব-ডারউইন সংশ্লেষণ(neo-Darwinian synthesis)

আধুনিক সংশ্লেষন কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন Julian Huxley তাঁর লেখা পুস্তকে- Evolution: The Modern Synthesis. ।