বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান

বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান
                                                    


মানুষের ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান একটি বৈপ্লবিক অধ্যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এতো নাটকীয় অগ্রগতি আগেকার কোনও শতাব্দীগুলিতে দেখা যায়নি। কিছু কিছু আবিষ্কার ( discovery) ও উদ্ভাবন ( invention ) এবং কিছু কিছু ঘটনা এই শতাব্দীতেই মানুষের জীবনে গভীর রেখাপাত করেছে ; অসংখ্যভাবে বিশ্বের সমস্ত দেশের মানুষ ও জীবের জীবনযাত্রায় ছাপ ফেলেছে। আমরা এই ধারাবাহিক নিবন্ধে ( আমাদের পছন্দ করা ) কিছু কিছু আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

একটা আখ্যান [ ১ ] দিয়ে শুরু করি। সে সময়টা ঊনবিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষদিকে- শোনা যাচ্ছে বিংশ শতাব্দীর পদধবনি। বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন [ উইলিয়াম থমসন, ১৮২৪-১৯০৭ ] উক্তি করলেন:
" There is nothing new to be discovered in physics now, all that remains is more and more precise measurement. "
" এখন আর কোনও নতুন আবিস্ত্রিïয়ার সম্ভাবনা নেই; পদার্থ বিদ্যায়, যা' বাকি রয়েছে তা' হল সূক্ষ থেকে সূক্ষতর মাপন।"

তখনকার কথা ধরলে লর্ড কেলভনের কথা অতিশয়োক্তি বলে মনে হয়নি কারণ, কযেক বত্সর আগে ১৮৯৫ থেকে ১৮৯৭ সালে চারটি বিরাট আবিষ্কার হয়েছে তা' হল ( যথাক্রমে ), রনজেন রশ্মি, ইলেকট্রন, জিমান এফেক্ট ও তেজস্কৃয়তা।
সেই সময় তাঁর অজ্ঞাতে, তখন বোধকরি, লিখে চলেছেন জার্মানীর এক কুঠিতে, মোমবাতির আলোতে, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক তাঁর বিখ্যাত গবেষণাপত্র যাতে মত প্রকাশ করলেন- শক্তি ( energy ) নির্মিত হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র 'প্যাকেট' সংযোগে, যাকে বলা যতে পারে 'কোয়াণ্টা' (quanta )। তখনও জার্মানীর ঘরে ঘরে বিদ্যুত্ আসেনি, আটলাণ্টিক পার হয়ে সুদূর আমেরিকায় এডিসন এবং টেসলা প্রতি ঘরে বিদ্যুত্ দেবার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। প্ল্যাঙ্কের প্রস্তাব বিজ্ঞানের মানচিত্রকে দিল পালটে, বিজ্ঞান ঝাঁপিয়ে পড়লো 'ম্যাক্রো' (macro) বা 'অতি' থেকে 'মাইক্রো' (micro) বা 'সূক্ষ'-তে। জীবনের বাকি প্রায় সাতচল্লিশ বত্সরে প্ল্যাঙ্ক দেখেছেন বিদ্যুতে চলা কত ব্যবহার্য বিশ্বের ঘরে ঘরে ; যখন দেহ রাখলেন- পৃথিবীতে এলো প্রথম 'কম্পিউটার'- শতাব্দীর সব থেকে বড় বিস্ময়।
বস্তুতঃ, প্ল্যাঙ্কের 'কোয়াণ্টা-তত্ব' এবং আইনস্টাইনের 'বিশেষ আপেক্ষিকতা বাদ' বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান-গবেষণায় এক আলোড়ন সৃষ্টি করলো যার প্রভাব গড়িয়ে চলে এসেছে একবিংশ শতাব্দীতে। শুধু পদার্থবিদ্যায় নয়, বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা এবং প্রযুক্তিবিদ্যা গভীরভাবে প্রভাবান্বিত হল এবং এই প্রভাব গবেষণাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়লো সাধারণ মানুষের জীবনে নানাভাবে।

বিংশশতাব্দীতে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা কিন্তু সবদিক দিয়ে মানুষের সুখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। মানুষের হাতে এই বিশাল 'সম্ভাবনা' এনে দিয়েছে অসাম্য ও লোভ ; ফলে দুটি বিশ্বযুদ্ধ ছাড়াও মানুষ আজ পেয়েছে 'ভোগ অর্থনীতি' (consumption economy ) -উন্নয়নের এই মডেল ধীরে ধীরে গ্রাস করেছে সারা বিশ্বকে। এর প্রতিফলন হল পরিবেশ দূষণে।
এটা ঠিক নয় যে বিজ্ঞানীরা আমাদের সাবধান করে দেননি। আজ থেকে ১২৪ বছর আগে জেমস হ্যানসেন ( মাঃ. যুক্তরাষ্ট্রের নাসা গডার্ড ইন্সটিটুটের অধ্যক্ষ ), ১৮৮৮ খ্রী-তে মার্কিন সিনেটে এক সাক্ষ্যদান প্রসঙ্গে অবহিত করেছিলেন যে 'গ্রীণহাউস ক্রিয়াকলাপ' ১৮৮০ খ্রী থেকে ১৮৮৮ খ্রী-র মধ্যে বিশ্বের তাপমান বাড়িয়েছে ০.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ১৮৯৬ খ্রী-তে সুইডিশ রসায়ন বিজ্ঞানী Svante Arrhenius দেখিয়েছিলেন যে, কয়লা-দহন বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে যে ভারসাম্য বর্তমান, তাকে বিঘ্নিত করবে। তিনি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন- অ-নিয়ন্ত্রিতভাবে কয়লা-দহন বায়ুমণ্ডলে এত কারবন- ডাই- অক্সাইড যুক্ত করবে যে বিশ্বের তাপমান বর্ধিত হবে অকল্পনীয়ভাবে।
নভেম্বর, ১৯৭২ : নোবেল ফাউণ্ডেশন আয়োজিত এক বিতর্ক সভার ফলশ্রুতি হিসাবে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীদের সম্মিলনী থেকে প্রচারিত এক ঘোষণাপত্রে ১০৪জন নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী সহ বিশ্বের ১,৭০০ বিজ্ঞানীরা সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন [পড়ুন : ' মনুষ্যত্বের কাছে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের সাবধানবাণী' ]।
আমি মনে করি, একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীদের সামনে রয়েছে দুটি আশু সমস্যা : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মুখে কি ভাবে খাদ্য যোগাবেন, এবং ' আবহাওয়া পরিবর্তন ' সঞ্জাত সমস্যা।
বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানে যেসব আবিষ্কার, উদ্ভাবন এবং কিছু মূল ঘটনা আমরা নীচে উল্লেখ করবো সেগুলি চয়ন করা খুবই শক্ত এটা আপনারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন। এ বিষয়ে আমরা দুটি প্রকাশনার সাহায্য নিয়েছি [ ২, ৩ ]।

সূচীপত্র
                                                   
  1. সুমেরুজ্যোতি
  2. কোয়াণ্টাম তত্ব
  3. গামারশ্মি
  4. কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি
  5. মনুষ্য-রক্তের শ্রেণির আবিষ্কার
  6. বায়ুমণ্ডলের স্তর
  7. আন্তিকিথেরা যান্ত্রিকপদ্ধতি
  8. 'মিউটেশন' তত্ব
  9. হরমোন
  10. তেজস্ক্রিয়তার কারণ ও প্রকৃতি
  11. বোভারি-সাটন ক্রোমোসোম তত্ব
  12. ভিটামিন
  13. তেজস্কৃয়তা
  14. পৃথিবীর অন্তস্থল (Core)
  15. আলোর দ্বৈতসত্তা
  16. অতি নিম্ন তাপমান
  17. বার্গেস কর্দমশিলা
  18. মোহোরোভাইক বিচ্ছিন্নতা
  19. উইলিয়াম কুলিজ এবং তাঁর এক্স-রশ্মি টিউব
  20. বোর-এর আনবিক মডেল
  21. সাধারণ আপেক্ষিতাবাদ তত্ব
  22. ক্রোমোজোম তত্ব ও জীন-ম্যাপ
  23. নিউক্লিয়াস আবিষ্কার
  24. অপরিবাহিতা (Superconductivity)
  25. নভোরশ্মি (কসমিক রে)
  26. মহাদেশীয় সঞ্চরণ (Continental drift)
  27. নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter)
  28. জীন-তত্ব এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন-তত্বের সংশ্লেষণ
  29. তুষারযুগের এক নূতন ঘূর্ণন
  30. বোস-আইনা্‌স্টাইন সাংখ্যায়ন
  31. তাপীয় আয়নন তত্ত্ব
  32. ইলেক্ট্রন স্পিন
  33. রমন এফেক্ট
  34. রাসায়নিক বন্ধন
  35. ভূচৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মেরুত্ব
  36. বেতার-জ্যোতির্বিদ্যা
  37. আধুনিক বিবর্তনীয সংশ্লেষণ
  38. চন্দ্রশেখর সীমা
  39. পজিট্রন আবিষ্কার
  40. রিখটার স্কেল
  41. নিউট্রন আবিষ্কার
  42. নিউট্রন-নক্ষত্র
  43. ভিটামিন B-র গঠন
  44. সাইট্রিক অম্ল চক্র
  45. নিউক্লীয় বিভাজন
  46. অতি-তরলতা
  47. DNA- বংশগতির মূল উপাদান
  48. তেজস্ক্রিয় অঙ্গার দ্বারা বয়স নির্ণয়
  49. ট্র্যানজিস্টার
  50. ক্রমবর্ধমান বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড
  51. টেফলন
  52. জোড়া ক্রোমোজম
  53. একস্‌-রে কেলাস-বিজ্ঞান, মিয়োগ্লোবিন
  54. কেয়স তত্ত্ব
  55. আলজাইমার ব্যাধি







দ্রষ্টব্য:
[1] 'defining moments in SCIENCE ', UK 2008, Cassell Illustrated, Octopus Publishing Limited, London E14 4JP, পৃ ১২|
[2] ibid.আমাদের মনে হয় অনবদ্য এই বইটি বিশ্বের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারে সংরক্ষিত থাকা উচিত।

[3] Chronology of twentieth-century science, “ A Century of Nature : Twenti-One Discoveries that Changed Science and the World “, Laura Garwin and Tim Lincoln, editors.